স্টাফ রিপোর্টার ।।
কতটুকু অভিজ্ঞতা অর্জন করলে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যায়? জালজালিয়াতি, প্রতারনা কিংবা ভুয়া সনদ তৈরী করে রাষ্ট্রের উচ্চ মহলে বসা বা প্রতিষ্ঠান খুলে কোটিপতিও হওয়া যায়। গত কয়েক বছরে এমন চক্রের অনেকেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়েছে। ময়মনসিংহেও এমন এক প্রতারক দম্পতির সন্ধান মিলেছে। যিনি বয়লার মুরগী ব্যবসায়ী থেকে প্রিন্সিপাল হয়ে গেছেন। খুলে বসেছেন ৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলোর কোনটা বৈধতা আছে কি? নাকি জালিয়াতির মাধ্যমে এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন?
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ময়মনসিংহ শহরের সিকে ঘোষ রোডে একটি ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে ময়মনসিংহ সেন্টাল কলেজ। এর প্রিন্সিপাল হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম। তার আরো ২ টি শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একাধারে তিনি একজন সাংবাদিক! তার সাথে কথা বলার সময় তিনি নিজেকে পত্রিকার সম্পাদক দাবী করেন। তিনি তার স্ত্রীর ফারজানা নাসরীন পিতা হিসেবে শহরের মরহুম এড,মোহাম্মদ আলীকে প্রতিষ্ঠিত করতে চরম মিথ্যা ও জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। ভূমি অফিস থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন, জেলা রেজিষ্ট্রার অফিসের একাধিক প্রতিবেদনে আমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফারজানা নাসরীন তা প্রমান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ সকল প্রতিটি দপ্তরে উভয়েই চরম মিথ্যা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। আগেই প্রচার ছিল তারা স্বামী-স্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতায় গাফলা নিয়ে!
ময়মনসিংহ সেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠায় চরম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে শিক্ষার পরিবেশ, ভবন, পারিপার্শিক পরিবেশ, অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী, খেলাধুলার স্থান, প্রিন্সিপাল হওয়ার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসহ ছাত্র/ছাত্রীর সংখাও বিদ্ধমান থাকতে হবে। অথচ এর প্রতিটি খেলাপ হলেও শিক্ষাবোর্ড কি করে এর অনুমোদন দিলেন তা শহরবাসীদের প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছে। এখানে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি না থাকলেও শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক রহস্যজনক কারনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এর আরো ২ টি শাখা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নং ওয়ার্ডে ময়মনসিংহ সেন্টাল স্কুল ও কলেজ এবং চুরখাই মোড়ে মানবিক স্কুল এন্ড কলেজ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জানাগেছে, খুপড়ি ঘরে ৩/৪ টি রুম নিয়ে চলে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মুরগীর ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বিতর্কিত শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে রাতারাতি ৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। আমিনুল ইসলাম তার স্ত্রী ফারজানা নাসরীন এর পিতা বানাতে জালজালিয়াতী করেছেন। প্রশাসনিক তদন্তে ধনাঢ্য মরহুম এড, মোহাম্মদ আলীকে পিতা বানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ময়মনসিংহ সদর ভূমি অফিসে, সিটি কর্পোরেশনে, কাজি অফিসে ও জেলা রেজিষ্ট্রার অফিসে ফারজানা নাসরীন মরহুম এড, মোহাম্মদ আলীকে পিতা বানাতে সম্পুর্ণ ব্যর্থ হলেও ময়মনসিংহ বার আইনজীবি সমিতি থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। অথচ জেলা আইনজীবি সমিতির ২৯ অক্টোবর/২০২০ শোক সভায় এড,মোহাম্মদ আলীর জীবন বৃতান্তে উল্লেখ করেছেন তার ১ পুত্র মৃত সায়েব চৌধুরী ও ১ কন্যা রীমা সোহেলী চৌধুরীকে। আইনজীবি সমিতি থেকে কি করে ফারজানা নাসরীন টাকা তুলে নেন? এটাতো সুশীল সমাজকে ভাবিয়ে তুলার কথা।
প্রতারক ফারজানা নাসরীন জমি খারিজ করে সদর ভূমি অফিসে ধরা খেয়েছেন। তার মায়ের বিয়ের কাবিন জালিয়াতি করেও ধরা পড়েছেন। ময়মনসিংহ জেলা রেজিষ্ট্রার এর প্রতিবেদন দিয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনে মৃত্যু ও ওয়ারিশান সনদ করতে গিয়ে তার জালজালিয়াতি প্রকাশ পায়। এই বিশাল জালিয়াত চক্র এখন ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এ জালিয়াত চক্রের কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্ম কতটাই বৈধতা আছে?